মায়ের খাবার স্টলের সাহায্যকারী হালিমা ইয়াকুব সিঙ্গাপুরের প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি।

সি’ঙ্গাপুরের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন অ’ভিজ্ঞ রাজনীতিক হালিমা ইয়াকুব। তিনি দেশটির

অষ্টম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। এর আগে পার্লামেন্ট সদস্য, প্রতিমন্ত্রী ও সর্বশেষ স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা হালিমা দেশটির ৪৭ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয় মালয় প্রেসিডেন্ট।

আইনি জটিলতায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন এই

অ’ভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান। বিশু’দ্ধ গণতন্ত্রের দেশ হিসেবে পরিচিত সি’ঙ্গাপুরে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এক প্রেসিডেন্ট

অনেকের কাছেই অ’প্রত্যাশিত ছিল। সমালোচকেরা মনে করছেন এতে জনগণের সমর’্থনের যে আবেদন তা অনুভব করতে পারবেন না নতুন প্রেসিডেন্ট।

তবে হালিমা’র সমর’্থকরা বলছেন, দীর্ঘদিন রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গু’রুত্বপূর্ণ পদে কাজ করে আসা হালিমা কিছুতেই জনগণ থেকে বিচ্ছিন’্ন নন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া তার রাষ্ট্রীয় কাজে কোনো প্রভাব ফেলবে না।

প্রেসিডেন্ট জে ওয়াই পিল্লে’র স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন হালিমা। ভারতীয় মুসলিম বাবা ও মালয় মায়ের সন্তান হালিমা’র বয়স যখন আট’ বছর তখন তার বাবার মৃ’ত্যু হয়।

বাবা পেশায় ছিলেন প্রহরী। এরপর থেকে মায়ের অ’ভিভাবকত্বে মানুষ হয়েছেন হালিমা। তিনি পরিবারের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। সংসার চালাতে তার মা হকার লাইসেন্স নিয়ে রাস্তার পাশে একটি খাবারের স্টল দেন।

সেই স্টল চালাতে হালিমা তার মাকে সাহায্য করতেন ছোটবেলা থেকেই। স্কুলের পাঠ শেষে ১৯৭৮ সালে আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেছেন ইউনিভার্সিটি অব সি’ঙ্গাপুর থেকে। তিন বছর পর আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন সি’ঙ্গাপুর বারে।

এর অনেক বছর পর ২০০১ স্নাতকোত্তর করেছেন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সি’ঙ্গাপুর থেকে। আর ২০১৬ সালে একই

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’স ডিগ্রি। হালিমা’র স্বামী মোহা’ম্ম’দ আবদুল্লাহ আল হাবশি একজন আরব বংশোদ্ভূ’ত।

আইন পেশায় কিছুদিন কাজ করার পর ১৯৯২ সালে সি’ঙ্গাপুরের ন্যাশানল ট্রে’ড ইউনিয়ন কংগ্রে’সে যোগ দেন আইন কর্মকর্তা হিসেবে। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন গু’রুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন শ্রমিক ও শ্রমসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে।

হালিমা’র কর্মজীবনের বড় একটা অংশজুড়েই রয়েছে শ্রমিক সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্টতা। এই সূত্র ধরে তিনি একাধিকবার জেনেভার আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনের ভাইস চেয়ারপারসন হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

দায়িত্ব পালন করেছেন এই কমিটির মুখপাত্র হিসেবেও। এর আগেই অবশ্য ২০০১ সালে রাজনীতিতে নাম লেখান হালিমা

ইয়াকুব। সে বছরই এমপি নির্বাচিত হন তিনি। ২০১১ সালে সি’ঙ্গাপুরের জাতীয় নির্বাচনের পর নতুন সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান সমাজ উন্নয়ন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের।

আর পরের বছর তাকে দায়িত্ব দেয়া হয় সমাজ ও পরিবার উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে। ২০১৫ সালে পিপলস অ্যাকশন পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হন হালিমা। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে সি’ঙ্গাপুর পার্লামেন্টের স্পিকার নির্বাচিত হন তিনি।

রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের একের পর এক সফল পদ’ক্ষেপ তাকে টেনে নিয়ে যায় রাষ্ট্রনেতার আসনের দিকে। সাড়ে চার বছর স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর গত ৭ আগস্ট দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেন, প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য।

রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে সব সময়ই উগ্রপন্থা, বর্ণবাদের মতো ইস্যুগু’লোর বিরু’দ্ধে সোচ্চার হালিমা ইয়াকুব। আইএসের মতো উগ্রপন্থী গ্রুপগু’লোর বিরু’দ্ধে সামাজিক ও রাজনৈতিক বয়কটের ডাক দিয়ে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন দেশে-

বিদেশে। দীর্ঘদিন শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে কাজ করার ফলে হালিমা’র রয়েছে তৃণমূলপর্যায়ের মানুষের সাথে মেশার অ’ভিজ্ঞতা।

যা সি’ঙ্গাপুরের উন্নয়নের ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। আর সমালোচকেরা বলছেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হওয়ার কারণে হালিমা জনগণের চাওয়া-পাওয়া কতটা বুঝতে পারবেন তা নিয়ে সন্দে’হ

আছে। অবশ্য বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার কোনো দায় তার নেই। অন্য দুই প্রার্থী ফরিদ খান ও মোহা’ম্ম’দ সালেহ মা’রিকান আইনি বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে না পারায় প্রার্থী ’হতে পারেননি।